কুষ্ঠ রোগ কেন হয়
কুষ্ঠ একটি দীর্ঘমেয়াদি জীবাণুঘটিত সংক্রামক রোগ, যা মাইকোব্যাকটেরিম লেপ্রি দিয়ে হয়। এ রোগে মূলত প্রান্তিক স্নায়ু আক্রান্ত হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চামড়ার মাধ্যমে এ রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। প্রান্তিক স্নায়ু ও ত্বক ছাড়াও এ রোগে অন্যান্য অঙ্গ যেমন নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লি, অস্থি আক্রান্ত হয় এবং প্রান্তিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে স্নায়ু কর্তৃক সরবরাহকৃত মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অকার্যকর হয়ে পড়ে।
চোখের পাতার মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে কুষ্ঠরোগীর দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও কখনো কখনো কিডনি এবং পুরুষ রোগীদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ আক্রান্ত হয়ে বন্ধ্যত্ব রোগ দেখা দিতে পারে।
নরওয়ের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডা. আরমান হ্যানসেন কর্তৃক ১৮৭৩ সালে কুষ্ঠ জীবাণু আবিষ্কারের ফলে কুষ্ঠ রোগের কারণ সম্পর্কে মানুষ নিশ্চিত হন। কিন্তু ১৯৬০ সাল পর্যন্ত কুষ্ঠ রোগের কার্যকর চিকিৎসা মানুষের আয়ত্তের বাইরেই থেকে যায়। ১৯৬০ সালে মার্কিন চিকিৎসা বিজ্ঞানী জন শেফার্ড ইঁদুরের দেহে কুষ্ঠ রোগের জীবাণুর বংশবিস্তার এবং এ রোগের কার্যকর ওষুধ আবিষ্কার করেন। বর্তমানে কুষ্ঠ চিকিৎসায় ব্যবহৃত অত্যন্ত কার্যকর মাল্টি ড্রাগ থেরাপি এ আবিষ্কারেরই ফল, যা ১৯৮২ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে।
কুষ্ঠ রোগ কিভাবে ছড়ায় : মানুষকেই কুষ্ঠ রোগের প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কুষ্ঠ রোগের জীবাণু সংক্রামক কুষ্ঠ রোগীর হাঁচি, কাশির মাধ্যমে বের হয়ে বাতাসে মিশে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ লোকের দেহে প্রবেশ করে। শৈশব থেকে বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত যেকোনো সময় কুষ্ঠ রোগ হতে পারে। তবে ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। নারী-পুরুষ উভয়ই কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, তবে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই বেশি আক্রান্ত হন।
কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ : কোনো ব্যক্তির নিম্নলিখিত এক বা একাধিক উপসর্গ বা লক্ষণের উপস্থিতির জন্য ওই ব্যক্তিকে সন্দেহজনক কুষ্ঠ রোগী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে :
►চামড়ায় ফ্যাকাশে, লালচে অথবা তামাটে বর্ণের দাগ।
►দাগ অনুভূতিহীন অথবা দাগে অনুভূতি কমে যেতে পারে।
►হাতে বা পায়ে অনুভূতিহীনতা বা ঝিনঝিন অনুভূতি।
►হাতে, পায়ে বা চোখের পাতায় দুর্বলতা অনুভূত হওয়া।
► ব্যথাযুক্ত স্নায়ু বা স্নায়ুগুলো চাপ দিলে ব্যথা হওয়া।
►মুখমন্ডল বা কানের লতিতে গুটি অথবা চামড়া পুরু হওয়া।
►হাত বা পায়ে ব্যথাহীন ঘা বা পুড়ে যাওয়ার ক্ষত।
অধিকাংশ কুষ্ঠ রোগীর চামড়ার দাগ বা দাগগুলো পরীক্ষা করে খুব সহজেই রোগ নির্ণয় করা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে কুষ্ঠ রোগ প্রতিরোধের কোনো কার্যকর টিকা নেই। সেজন্য কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি চিকিৎসার আওতায় আনতে হবে।
ডা. সমরেশ হাজরা
কনসালট্যান্ট, চর্ম ও যৌন, কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা
[…] কুষ্ঠ রোগ কেন হয় […]