মানসিক রোগ নিয়ে সমাজে এতো লজ্জা কেন?

কেস-স্টাডি ১.
মনিরুল আলম। এটি অবশ্য তাঁর ছদ্ম নাম। গত ১৫ বছর ধরে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ২০০৩ সাল থেকে হাসপাতালের রেকর্ডে তাঁর নাম আছে।

জটিল মানসিক রোগে আক্রান্ত হবার পর মনিরুলের পরিবার তাঁর কাছ থেকে মুক্তি পেতে চেয়েছিল। ফলে মানসিক হাসপাতালে তাকে ভর্তি করিয়ে নিজেদের দায় সেরেছে।

একটি ভুয়া ঠিকানা দিয়ে ২০০৩ সালে তাকে ভর্তি করানোর পর থেকে পরিবারের আর কোন খোঁজ নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে যে ঠিকানা রয়েছে সেখানে তারা বেশ কয়েকবার খোঁজ নিয়েছেন।

কিন্তু সে ঠিকানায় মনিরুল আলমের কোন আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ মেলেনি। আলম এখন বেশ শান্ত শিষ্ট। এ হাসপাতালে কবে এসেছেন? এমন প্রশ্নে মি: আলম শুধু বলেন, “অনেক আগে।”

এর বেশি কিছু তিনি আর বলতে পারেন না। তিনি বাড়ি ফিরতে চান। কিন্তু ফেরার কোন জায়গা নেই তার। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ৪৫ বছর বয়সী মনিরুলের বাকি জীবনও পাবনার মানসিক হাসপাতালে বন্ধ ঘরের মধ্যেই কাটবে।

বাংলাদেশের সমাজে জটিল মানসিক রোগে যারা আক্রান্ত হন, তাদের প্রতি পরিবার এবং সমাজের কেমন দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, মনিরুল আলম তার একটি উদাহরণ মাত্র।

কেস-স্টাডি ২.

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের বাসিন্দা রিনা বেগমের স্বামী ১৭ বছর যাবত সৌদি আরবে ছিলেন। বছর পাঁচেক আগে তিনি সেখানে থেকে দেশে ফিরে আসেন। সংসার তাদের ভালোই চলছিল। ছেলে-মেয়ে নাতি-নাতনির সমন্বয়ে ছিল তাদের পরিবার।

কিন্তু মাস তিনেক আগে রিনা বেগমের স্বামীর ব্যবহার এবং চালচলনে অস্বাভাবিকতা আসে। যে মানুষ কখনো ঝগড়া করতে না তিনি স্ত্রী এবং সন্তানদের গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা করেন না।

একবার বাড়ি থেকে বের হলে বাড়ি ফিরতে চাইতেন না। কিন্তু তারপেরও প্রথমদিকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে চাননি তিনি। কারণ মানসিক ডাক্তারের কাছে আসলে প্রতিবেশীদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে সেটি নিয়ে কিছুটা চিন্তিত ছিলেন রিনা বেগম।

শেষ পর্যন্ত ঢাকার মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে এসে তিন সপ্তাহ চিকিৎসার পর এখন অনেকটাই সুস্থ রিনা বেগমের স্বামী। যখন তাদের সাথে দেখা হলো তখন তারা বাড়ি ফিরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

মানসিক রোগ নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি
মানসিক হাসপাতালগুলোতে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন প্রত্যেকের জীবনের একটি করে করুন গল্প আছে, যার ফলে তারা মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন। কেউ প্রেমে ব্যর্থ, কেউ পারিবারিক অশান্তি, পেশাগত জীবনে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পাওয়া কিংবা মাদকাসক্তি- এসব বিষয় তাদের মনে তীব্র আঘাত দিয়েছে।

মনিরুল আলমের মতো অনেক মানসিক রোগী এখানে আসেন এবং চিকিৎসা শেষে ফিরে যায়। কিন্তু ফিরে যাবার পর পরিবার এবং সমাজ তাদের যে দৃষ্টিতে দেখে সেটি তাদের জন্য আরো বিব্রতকর।

ফলে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যাবার পর একই সমস্যায় তারা আবারো আক্রান্ত হয়। পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস বলেন, যারা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে তাদের মধ্যে নব্বই শতাংশ কিংবা তার চেয়ে বেশি আবারো পুনরায় মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এজন্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি একটি বড় কারণ বলে মনে করেন অধ্যাপক বিশ্বাস।

তিনি বলেন, `রোগটি পুনরায় ফিরে আসার কারণ দুটি। একটি হচ্ছে, রোগির সাথে তাঁর পরিবার এবং সমাজ যথাযথ ব্যবহার করে না এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ঔষধ ঠিক মতো না খাওয়া। তাকে একজন সাধারণ মানুষের মতো দেখতে হবে। তাঁর মতামতকে মূল্য দিতে হবে। কিন্তু আমাদের সোসাইটি মেম্বাররা কী করে? এই তুই তো পাগল, তুই থাম – এ ধরণের নেগেটিভ কথা তাদের মনে আঘাত করে।’

অনেক সময় মানুষের কষ্টের জায়গা নিয়ে হাস্যরস করে সেটিকে উড়িয়ে দেবার প্রবণতা দেখা যায় বাংলাদেশের সমাজে। ঢাকায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, তাদের নিয়ে মজা করে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।”

মানসিক রোগের চিকিৎসা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি

মন মানুষের শরীরে একটি অদৃশ্য বিষয়। দৃশ্যমান না হওয়ায় মনের অসুখে আক্রান্ত হবার বিষয়টিও সহজে নজরে আসেনা অনেকের। যদিও নজরে আসে তখন চিকিৎসার চেয়ে তথাকথিত পারিবারিক সম্মান বাঁচানোর দিকেই অনেকে বেশি মনোযোগী থাকে।

মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে অনেকেই সহজে চিকিৎসকের আসতে চাননা। কারণ তাদের ধারণা চিকিৎসকের কাছে আসলেই লোকে ‘পাগল’ বলবে।

বাংলাদেশে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যের জরিপ অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ কোন না কোনভাবে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। মূলত সামাজিক লজ্জার কারণেই অনেকে শুরুতে চিকিৎসকের কাছে আসতে চায়না।

পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করলে তখন তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসকরা বলছেন, সময়মতো চিকিৎসা নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা তৈরি হয় সামাজিক লজ্জার কথা ভেবে।

চিকিৎসক মেখলা সরকার বলেন, মানসিক রোগ সবসময় পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু এর উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।

`যেমন আমরা ডায়াবেটিস কিউর (নিরাময়) করতে পারি না। কিন্তু কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করা যায়। মানসিক রোগের সিম্পটম নিয়ন্ত্রণ করা গেলে রোগী স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে,’ বলছিলেন মেঘলা সরকার।

Doctor List

Contac Us

Facebook

Original Source Link

Reviews

3 Comments

  1. I am really enjoying the theme/design of your blog.
    Do you ever run into any browser compatibility issues?
    A number of my blog visitors have complained about my
    blog not operating correctly in Explorer but looks great in Chrome.
    Do you have any advice to help fix this issue?
    istanbul escort
    şirinevler escort
    taksim escort
    mecidiyeköy escort
    şişli escort
    istanbul escort
    kartal escort
    pendik escort
    tuzla escort
    kurtköy escort

     
  2. It’s appropriate time to make some plans for the long
    run and it is time to be happy. I have read this
    publish and if I may I wish to recommend you few fascinating things or suggestions.
    Perhaps you could write next articles regarding
    this article. I wish to learn more things approximately
    it! I’ve been browsing online more than 4 hours today, yet I never
    found any interesting article like yours. It’s pretty worth enough for me.
    In my view, if all webmasters and bloggers made good content as you
    did, the internet will be a lot more useful than ever before.
    These are in fact impressive ideas in concerning blogging.
    You have touched some fastidious things here. Any way keep up wrinting.

    http://aoc.com

     

Comments are closed.

x